বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ অপরাহ্ন
সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি, কালের খবর : নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল (চিটাগাংরোড) টু নারায়ণগঞ্জের খানপুর সড়কে চলাচলরত ৫ সহস্রাধিক ইজিবাইক থেকে সিদ্ধিরগঞ্জপুল ও শিমরাইলমোড় থেকে সরকারী দলের ব্যানারে সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ বেপারীর নেতৃত্বে তার নিয়োজিত লোকজন প্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করছে। ব্যাটারিচালিত প্রতিটি ইজিবাইক থেকে শিমরাইল মোড়ে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতিমাসে ৭৫ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা কালেকশন করা হচ্ছে। চাঁদার পরিমাণ বছরে দাঁড়ায় ৯ কোটি টাকা।
এদিকে, আদায়কৃত চাঁদা থেকে শিমরাইলস্থ ডিএনডি পাম্প হাউজ এলাকায় ও সিদ্ধিরগঞ্জ পুলে দায়িত্বরত শিল্প পুলিশকে সকাল-বিকেল নির্দিষ্ট অংকের চাঁদা দেওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশকে মোটা অংকের মাসোহারা দিয়ে ইজিবাইক মালিক সমিতির নামে নির্বিঘ্নে এ চাঁদা উত্তোলন করছে বলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ২৩০২ রেজিঃ নং এর নামে ওই নামমাত্র শ্রমিক সংগঠন ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত প্রতিটি বাস মিনিবাস থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। প্রতিদিন সামাদ বেপারীর লোকজন অর্ধলক্ষ টাকা চাঁদা উত্তোলন করছে বাস-মিনিবাস থেকে।
এদিকে ইজিবাইক চালকদের অভিযোগ, মালিক সমিতির নামে কোন অস্তিত্ব নেই। তাছাড়া ইজিবাইকের কোন মালিক কিংবা চালক স্বেচ্ছায় এ চাঁদা দেয় না। লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং মারধর করার ভয় দেখিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা শ্রমিকলীগ এর ব্যানারে এবং গামেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় এক নেতা ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ এর এক নেতা নেতৃত্বে তাদের নিয়োজিত লোকজন এ চাঁদা নিয়মিত আদায় করছে। সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজী আঞ্চলিক শ্রমিকলীগের সভাপতি আব্দুস সামাদ বেপারী ও ইজিবাইক মালিক সমিতির সভাপতি মাসুদ রানা , সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াছ মোলা বলেন,আমরা ইজিবাইক মালিকদের নিয়ে মালিক সমিতি গঠন করেছি এখান থেকে কিছু টাকা আসে যা দিয়ে কয়েকজন লাইনম্যান এর বেতন এবং সমিতির লোকজনের চা পানির ব্যবস্থা হচ্ছে মাত্র । হাজার হাজার ইজি বাইকের কারণে প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে সকাল ৯ টা এবং বিকেল ৫ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত শিমরাইলমোড় থেকে আদমজী ইপিজেডগেট পর্যন্ত যানজট ডেডলক আকার ধারণ করে। ওই সড়কে চলাচলরত যাত্রীসাধারণকে অবনর্ণীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ওই সময়ে অ্যাম্বুলেন্সে মুুমুর্ষ রোগীও ঘন্টার প ঘন্টা ইজিবাইকের কারণে যানজটে আটকা পড়ে। এই ইজিবাইকের নেই কোন বৈধতা কিংবা কোন কাগজপত্র।শিমরাইলমোড়ে ইজিবাইক চাপায় একাধিক শিমুসহ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গত ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসের ৭তারিখে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ শিমরাইলমোড়- নারায়ণগঞ্জ সড়কে চলাচলরত সকল ইজিবাইক চলাচল হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়। নিয়ম শৃঙ্খলা মাফিক এবং যানজট সৃষ্টি করবেনা এবং সড়কে কোন চাঁদাবাজি করবেনা এই শর্তে তৎকালীন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস সাত্তার মিয়া ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি প্রদান করেন ওই বছরের ১৫ অক্টোবর। ইজিবাইক বন্ধের আগে প্রতিটি ইজিবাইক থেকে চাঁদা আদায় করতো ৩০ টাকা করে আর বন্ধের পর নতুন করে চালু হওয়ায় ইজিবাইক থেকে আরও ২০ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি ইজিবাইকের প্লেট নম্বর এর নামে ২২৫০ টাকা করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে ইতিপূর্বে। ইতিমধ্যে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইজিবাইকে অবৈধভাবে দেওয়া প্লেট নম্বর প্রদান করে। প্রতিমাসে ৭৫ লক্ষাধিক টাকার ও বেশী চাঁদা কালেকশন করার গুরুতর অভিযোগ রয়েছে সরকারী দলের ওই সকল নেতাকর্মীরা নামে। শিমরাইলমোড় থেকে আদমজী ইপিজেড গেট পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়কে প্রতিদিনই অবৈধ ইজিবাইকের কারণে অসহনীয় যানজটে পড়তে হচ্ছে ওই সড়কে চলাচলরতদের। প্রতিদিনই ইজিবাইকের সংখ্যাও বাড়ছে। নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ এসব নিয়ন্ত্রণে কিংবা যানজট নিরসনে কাজ না করায় সকাল সন্ধ্যা ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকা পড়ে লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেকেই সিদ্ধিরগঞ্জ ও আদমজী থেকে ঢাকায় সরকারী বেসরকারী চাকরী করেন আবার অনেকেই ঢাকায় ব্যবসা বনিজ্য করেন কিন্তু ইজিবাইকের কারণে সৃষ্ট যানজটের কারণে তারা সময় মতো কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। অ্যাম্বুলেন্সে মুমুর্ষ রোগীও আটকা পড়ছে প্রতিদিনই। এ অঞ্চলের মানুষের জীবনগাঁথা দুঃখ ইজিবাইক।
ইজিবাইকে চাঁদাবাজি সম্পর্কে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) নজরুল ইসলাম এর কাছে জানতে চাইলে এই সড়কে ৫ হাজার ইজিবাইক রয়েছে স্বীকার করে তিনি বলেন, চাঁদা আদায় করার কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষনিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো। ইজিবাইক মালিকদের সাথে আমরা খুব শিগগিরই বসব।
নারায়ণগঞ্জ যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শাখার নারায়নগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলমোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ( টিআই) শরীফ- উল- ইসলাম বলেন, যানজট নিরসনের জন্য নারায়ণগঞ্জ শিল্প পুলিশ থেকে সকালের জন্য (সকাল ৬ টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত) ৬ জন এবং বিকেলের জন্য (বেলা ২ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত) ৬ জন পুলিশ চেয়ে এনেছি। তবে তারা কি করছে আমার জানা নেই। টিআই আরও বলেন, কারা শিমরাইলমোড়ে ইজিবাইক থেকে চাঁদাবাজি করছে তাও আমার জানা নেই ।
নারায়ণগঞ্জ সিটিকরপোরেশনের ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী ওমর ফারুক ও ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল বলেন পরিবহনে কোন প্রকার চাঁদাবাজি চলবেনা। কেউ চাঁদাবাজি করলে তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে উদাত্ত আহবান জানান কউন্সিলরদ্বয়।
প্রকাশ্যে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ইজিবাইক ও গন পরিবহন থেকে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন ইজিবাইক চালক ও গন পরিবহন শ্রমিকরা। বছরের পর বছর সামাদ বেপারী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে হাতে গোনা কয়েকজন মিলে লুটেপুটে খাচ্ছে। পরিবহন থেকে আদায়কৃত চাঁদার টাকা দিয়ে সামাদ বেপারী একাধিক বাড়ি, জমি, কভার্ডভ্যান, গাড়ি করেছেন। শূণ্য থেকে সামাদ বেপারী আজ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। দুর্ণীতি দমন কমিশনের কাছে সিদ্ধিরগঞ্জবাসীর আবেদন সামাদ বেপারীর অর্জিত ধন সম্পদের খোঁজ নিয়ে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানান।